Header Ads

ads header

New Post

তেঁতুলের ভেষজগুণ ও পুষ্টিমান

 


তেঁতুলের নাম শুনলেই জিভে পানি এসে যায়, বিশেষকরে নারীদের তেঁতুল পছন্দ করে না এমন নারী খুঁজে পাওয়া মুশকিল তাহলে ছেলেরা তালিকায় নেই? তাও কী করে বলি! খেতে বসলে দেখা যায়, কোনো কোনো পুরুষ মেয়েদেরও হার মানায় আসলে ফলটি সবার কাছে অন্য এক আকর্ষণ দক্ষিণ আফ্রিকায় মূল্যবান খাবারের মধ্যে তেঁতুলের স্থান অন্যতম অথচ গ্রামাঞ্চলের কেউ কেউ মনে করেন, তেঁতুল খেলে রক্ত পানি হয়ে যায়; সে সাথে বুদ্ধিও কমে এজন্য বাচ্চাদের তেঁতুল খেতে বারণ করা হয় এগুলো নিছক কুসংস্কার বাস্তবে ঠিক উল্টো তেঁতুল রক্ত পরিষ্কার করে মস্তিষ্কে চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় কাঁচা তেঁতুল খেতে টক, পাকা ফল টক-মিষ্টির এক ভিন্ন স্বাদ তেঁতুল খাবারে স্বাদ বাড়ায় জন্য গোশতের রোস্ট, পোলাও, খিচুরিতে ব্যবহার হয় তেঁতুলের টক, ভর্তা, ডাল অনেকের প্রিয় এছাড়া তৈরি করা যায় আচার, সস, জ্যাম, চাটনিসহ আরো খাবার আছে অনেক পুষ্টি ভেষজগুণেও ভরপুর এর বীজ নকশিশিল্পে ব্যবহার হয় তাই এর গুণাগুণ সম্পর্কে জেনে নেয়ার দরকার

পুষ্টিগুণ পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, এর প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচাফলে (আহারোপযোগী) ক্যালসিয়াম আছে ২৪ মিলিগ্রাম এবং পাকাফলে রয়েছে ১৭০ মিলিগ্রাম আয়রণের পরিমাণ কাঁচাফলে মিলিগ্রাম এবং পাকাফলে আছে ১০. মিলিগ্রাম করে কাঁচাফলে অন্য পুষ্টি উপাদানগুলো হলো- . গ্রাম আমিষ, ১৩. গ্রাম শর্করা, . গ্রাম চর্বি, .০১ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি১, .০২ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি২, মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, . গ্রাম খনিজ লবণ এবং খাদ্যশক্তি আছে ৬২ কিলোক্যালরি পাকা তেঁতুলে পুষ্টির পরিমাণ অনেক বেশি এর প্রতি ফলে . গ্রাম আমিষ, ৬৪. গ্রাম শর্করা, . গ্রাম চর্বি, .০৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি২, মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, . মিলিগ্রাম ভিটামিন , ১১৩ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ২৮ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ৬২৮ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম, ৯২ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম, . মিলিগ্রাম সিলিনিয়াম, .১২ মিলিগ্রাম দস্তা, .৮৬ মিলিগ্রাম তামা এবং খাদ্যশক্তি আছে ২৮৩ কিলোক্যালরি

ভেষজগুণ ইউনানি, আয়ুর্বেদী, হোমিও এবং এলোপ্যাথিক ওষুধের কাঁচামাল হিসেবে তেঁতুল সমাদৃত এর পাকা ফল হৃদরোগের জন্য উপকারি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে তেঁতুলের সাথে রসুন মিশিয়ে খেলে রক্তের কোলস্টেরল কমে নিয়মিত তেঁতুল খেলে প্যারালাইসিস রোগীর অনুভূতি ফিরে আসে টারটারিক অ্যাসিড থাকায় হজমশক্তি বাড়ায় তাই পেটফাঁপা কাশি দূর করতে পুরোনো তেঁতুল গুলে; সে সাথে পরিমাণমতো পানি, লবণ, গুড় অথবা চিনি মিশিয়ে খেতে হবে বুক ধড়ফড়, মাথা ঘুরানো, হাত-পা জালা, কোষ্ঠকাঠিন্য, আমাশয় ক্ষুধামন্দা নিরাময়ে বেশ কাজ করে তেঁতুল অতিরিক্ত ফ্যাট বের করে, প্রজননতন্ত্রের কাজ শক্তিশালী করে

ধুতরা, কচু এবং অ্যালকোহলের বিষাক্ততা নিরাময়ে তেঁতুলের শরবত বেশ কার্যকরি গাছের পাতা ছাল অ্যান্টিসেপটিক এবং অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল তাই শরীরের ক্ষত সারাতে সাহায্য করে পাশাপাশি হাঁপানি, চোখ ¦ালাপোড়া এবং দাঁতব্যথা সারিয়ে তুলে নিয়মিত ঘন্টাখানেক হেঁটে ২৫-৩০ গ্রাম তেঁতুল খেলে হৃৎপিন্ডে ব্লক হওযার আশঙ্কা থাকে না গর্ভাবস্থায় মায়েদের বমিবমিভাব দূর করে কাঁচা তেঁতুল গরম করে আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে প্রলেপ দিলে ব্যথা সেরে যায় মুখে ঘা হলে পানির সাথে তেঁতুল মিশিয়ে কুলকুচা করলে আরাম পাওয়া যায় নিরাময়েও কাজ হয় কোনো কোনো এলাকার মানুষ তেঁতুলপাতা বেঁটে, মরিচ লবণ মিশিয়ে বড়া বানিয়ে পান্তাভাতের সাথে খায় এতে শরীরে অনেক উপকারে আসে

কচি পাতায় প্রচুর পরিমাণে অ্যামাইনো অ্যাসিড রয়েছে পাতার রস সর্দি, কাশি, প্রস্রাবের যন্ত্রণা, পাইলস, কৃমি চোখওঠা সারাতে সহায়তা করে তেঁতুলের বিচিতে এক ধরনের এনজাইম আছে, যা রক্তের চিনির মাত্রা কমায় এতে ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে এছাড়া এর গুঁড়া নিয়মিত খেলে পেটের আলসার ভালো হয় তেঁতুলের তৈরি শরবত খেতে অন্যরকম স্বাদ অনেক রোগের মহৌষধ শরবত বানানোর জন্য আধাকাপ পরিমাণ পানিতে কয়েক ঘন্টা ভিজিয়ে গুলিয়ে নিতে হয় এরপর ছাকুনি দিয়ে ছেঁকে, অন্য পাত্রে দেড় কাপ পানিতে পরিমাণমতো গুড় গুলিয়ে, সে মিশ্রণ মেশাতে হবে সাথে থাকবে আয়োডিনযুক্ত লবণ পরে আরো এক কাপ স্বাভাবিক কিংবা ঠান্ডা পানি এভাবেই হয়ে যাবে ভেষজ শরবত এরপর গ্লাসে ঢেলে রুচিমতো লেবুর রস দিয়ে নিজে খাওয়া এবং অন্যদের পরিবেশন

তেঁতুলের পাতা দিয়ে ভেষজ কীটনাশক তৈরি করা যায় এজন্য একটি পাত্রে এক লিটার পানির সাথে ১০-১২ গ্রাম শুকনো পাতা এক সপ্তাহ ভিজিয়ে রাখতে হয় এরপর পাত্রটি ঢাকনা দিয়ে ঘন্টা রেখে দিতে হবে এবার ঢাকনা সরিয়ে / টুকরা রঙিন পলিথিন দিয়ে এমনভাবে মুখ বন্ধ করতে হবে যেন ভেতরে বাতাস ঢুকতে না পারে এভাবে এক সপ্তাহ রেখে দিয়ে হয় এবার ছাকুনির সাহায্যে ছেঁকে নিলেই হয়ে যাবে ফসলের ক্ষতিকর পোকা মারার কীটনাশক ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রতিলিটার পানিতে মিলিলিটার ভেষজ কীটনাশক মিশিয়ে আক্রান্তস্থানে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে

 

তেঁতুলে রয়েছে প্রচুর ভেষজ পুষ্টিগুণ:

 

  তেঁতুল দেহে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং হৃদরোগীদের জন্য খুব উপকারী

  রক্তের কোলেস্টেরল কমায়

  শরীরের মেদ কমাতেও কাজ করে তেঁতুল

  পেটে গ্যাস, হজম সমস্যা, হাত-পা জ্বালায় তেঁতুলের শরবত খুব উপকারী

  খিদে বাড়ায়

  গর্ভাবস্থায় বমি বমি বমি ভাব দূর করে

  মুখের লালা তৈরি হয়

  তেঁতুল পাতার ভেষজ চা ম্যালেরিয়া জ্বর কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয়

  শিশুদের পেটের কৃমিনাশক

১০  তেঁতুল ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সাহায্য করে

১১  পাইলস্ চিকিত্সার জন্য ব্যবহার করা হয়

১২  মুখে ঘাঁ ত্বকের প্রদাহ সারাতে সাহায্য করে

১৩  তেঁতুল রক্ত পরিস্কার করে

১৪  বাত বা জয়েন্টগুলোতে ব্যথা কমায়

১৫  ভিটামিন সি-এর বড় উৎস

১৬  পুরনো তেঁতুল খেলে কাশি সারে

১৭ পাকা তেঁতুলে খনিজ পদার্থ অন্য যে কোনো ফলের চেয়ে অনেক বেশি

১৮ খাদ্যশক্তিও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে

১৯ ক্যালসিয়ামের পরিমাণ সব ফলের চেয়ে থেকে ১৭ গুণ বেশি

২০ আর আয়রনের পরিমাণ নারকেল ছাড়া সব ফলের চেয়ে থেকে ২০ গুণ বেশি

 

প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা তেঁতুলের পুষ্টিমান:

ক্যালরি: ২৩৯, আমিষ বা প্রোটিন: ., শর্করা: ৬২. গ্রাম, ফাইবার: . গ্রাম, চর্বি: . গ্রাম, ফসফরাস: ১১৩ মিলিগ্রাম, লৌহ: .৮২ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম: ৭৪ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি: মিলিগ্রাম, মিনারেল বা খনিজ পদার্থ: . গ্রাম, ভিটামিন বি: .৩৪ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম: ৬২৮ মি:লি, ভিটামিন : . মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন: ৬০ মাইক্রোগ্রাম, সেলেনিয়াম: . মিলিগ্রাম, সোডিয়াম: ২৮ মিলিগ্রাম, দস্তা: .১২ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম: ৯২ মিলিগ্রাম, এবং তামা: ,৮৬ মিলিগ্রামতথ্যসূত্র : ইন্টারনেট

No comments